প্রশ্ন ১ঃ পূর্বের হারাম রিলেশনশিপের কথা পাত্র/পাত্রীকে কিংবা বিয়ের পর স্বামী/স্ত্রীকে বলা জরুরী কিনা?
যখন কোন মানুষ তার অতীত গুনাহ থেকে তাওবা করে ফিরে আসে আল্লাহ তার গুনাহ সমূহ ক্ষমা করে দেন।অনেক ভাই বোনেরা পাত্র/পাত্রী দেখার সময় প্রশ্ন করেন আপনার অতীত কোন সম্পর্ক ছিলো কিনা?এই প্রশ্ন করাটাই অযৌক্তিক।ব্যক্তি যে গুনাহ গোপনে করেছে ও যে গুনাহ থেকে তাওবা করেছে সে বিষয়ে প্রশ্ন করাই উচিত না।
একজন মানুষ অতীতে কেমন ছিলো তা দিয়ে তার বর্তমান সময় বিবেচনা করা উচিত না।সাহাবা(রাঃ) গণ যখন কাফের ছিলেন তারা পাপাচারে লিপ্ত ছিলো,উনারা যখন ইসলাম গ্রহণ করলেন সাথে সাথে সকল গুনাহ ছেড়ে দিলেন।এক একজন হয়ে গেলেন আমাদের জন্য আদর্শ।যারা ঈমান আনার পূর্বে ছিলো হাজারো পাপাচারে লিপ্ত,তারা ঈমান আনার পর হয়ে গেলো উত্তম আখলাকের উম্মাহর শ্রেষ্ঠ সন্তান।
যদি হারাম রিলেশনশিপ পূর্বে থেকে থাকে,তাহলে সহজ ভাবে বলুন আপনার কোন হারাম রিলেশনশিপ নেই।নেই বললে মিথ্যা হবে না।কারণ অতীতে ছিলো এখন বর্তমানে নেই।কেউ যদি প্রশ্ন করে এখন তো নেই অতীতে ছিলো কি না?তখন শান্তভাবে উত্তর দেন মানুষ যখন গুনাহ থেকে তাওবা করে আল্লাহ তার গুনাহ ক্ষমা করে দেন,একজন মুমিনের উচিত না কারো অতীত গুনাহের বিষয়ে প্রশ্ন করা,যে গুনাহ গোপনে করা হয় তা প্রকাশ করা উচিত না।
যদি এমন হয় আপনার অতীত রিলেশনশিপের কথা অনেকেই জানে।বিয়ের পর স্ত্রীর/স্বামীর অন্য কারো থেকে রিলেশনশিপের কথা জেনে যাওয়ার চ্যান্স থাকে, তাহলে শান্তভাবে উত্তর দেন জ্বী হারাম রিলেশনশিপ ছিলো।কিন্তু সেই সাথে এটাও বলে দেন "আপনি আপনার ভুল বুঝতে পেরেছেন ও আপনার অতীত গুনাহের জন্য আল্লাহর কাছে তাওবা করেছেন।ইনশা আল্লাহ এই হারাম পথে পা বাড়ানোর কোন ইচ্ছা আকাঙ্ক্ষা আপনার নেই।এটাও বলে দেন মুমিন অপর মুমিনের অতীত গুনাহের কথা নিয়ে খোটা দেয় না।এই কথাটা বলার কারণ হলো যাতে করে বিয়ের পর আপনার জীবনসঙ্গী আপনাকে অতীত নিয়ে খোটা দিতে না পারে।অনেকেই আছে দেখতে এসে এইসব জেনে পরবর্তী সময় খোটা দেয়।কারো অতীতের গুনাহ নিয়ে খোটা দেয়া কবীরাহ গুনাহ।
প্রশ্ন ৪ঃ যদি এমন হয় বিয়ের পর আপনি জানতে পারলেন আপনার জীবনসঙ্গীর হারাম রিলেশনশিপ ছিলো তখন কি করণীয়?
মানুষের স্বাভাবিক ফিতরাত অনুসারে কষ্ট লাগবে সেটাই স্বাভাবিক।কিন্তু তারমানে এই না সে আপনাকে না বলে ঠকিয়েছে।বরং আপনি যাতে করে একান্ত তাকে একার ভাবতে পারেন,আপনাদের সম্পর্ক যেন মধুর হয় সেইজন্য অতীত মানুষটির কথা বলেনি।তাই বিয়ের পর যখন হারাম রিলেশনশিপের কথা শুনবেন খারাপ লাগলেও জীবনসঙ্গীর সাথে খারাপ ব্যবহার করবেন না।বরং এটা ভাবুন সে আপনার সাথে সম্পর্কটা ভালো রাখার জন্যই মূলত অতীতকে টানেনি।আপনার তো উচিত এই কথা জানার পর জীবনসঙ্গীকে আরো বেশি ভালোবাসা,যাতে করে তার অন্তর থেকে সব মুছে গিয়ে আপনার নামই লিখিত থাকে।এক্ষেত্রে একটা বিষয় লক্ষণীয় অতীত মানুষটির কোন আলোচনা ই করবেন না।কারণ কারো আলোচনা করা মানে হলো তাকে স্বরণ করা।তাই নিজেদের মধ্যে অতীত কারো আলোচনা আনার মানেই হয় না।
অতীত রিলেশনের কথা না বলে বিয়ে করলে ঠকানো হবেনা।কারণ ব্যক্তি হারাম রিলেশনশিপে জড়িয়ে আল্লাহর দেয়া সীমালঙ্ঘন করেছে।তাই আল্লাহর কাছে তাওবা করাই এনাফ।বিয়ের আগে কেউ কারো অধিকারভুক্ত না।স্বামী স্ত্রী অধিকারের কথা তখন আসবে যখন তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবে।তাই হারাম রিলেশনশিপের কথা না বলে বিয়ে করাকে ঠকানো বলা অযৌক্তিক।ইসলামে ব্যক্তির গুনাহের কথা প্রকাশ না করার কথাই বলা আছে।তাই বিয়ের আগে আপনাকে হারাম রিলেশনশিপের কথা বলেনি বলে কেউ প্রতারক হয়ে যাবে না।
প্রশ্ন ৬ঃ উচিত না কারো অতীত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা।কারণ শয়তানের ধোঁকায় মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সন্দেহের দাঁনা বাঁধে,স্বামী/স্ত্রীর মধ্যে তুলনা চলে আসে,মনে হবে আপনার স্বামী/স্ত্রী হয়ত আপনাকে ভালোবাসেনা,হয়ত তার অন্তরে তার অতীত ভালোবাসার মানুষ বাসা বেঁধে আছে।এভাবে মানুষ একা একা কষ্ট পেতে থাকে।যা তাদের সম্পর্কের মধ্যে খারাপ প্রভাব ফেলে।নিজের জীবনকে বর্তমানে রাখুন এতেই ভালো থাকবেন ইনশাআল্লাহ।শুধু শুধু অতীতের এত কথা জেনে নিজেদের দাম্পত্য জীবনের সুখ নষ্ট করার মানেই হয় না।সাধারণ ভাবে ভেবে নিন রিলেশন হয়ত ছিলো,তাতে আপনার কি?সে এখন আপনাকে ভালোবাসলেই হলো।নিজের স্বামী/স্ত্রীর অতীত নিয়ে আজাইরা টাইম নষ্ট না করে বরং স্বামী/স্ত্রীকে এমন ভালোবাসুন যাতে করে তার অন্তর থেকে অতীতের নাম নিশানা সব মুছে যায়।
জীবনে চলার পথে কারো সাথে চলাফেরা করলে মনে হওয়াটা স্বাভাবিক।কিন্তু সেই চিন্তায় ডুবে থাকা অবশ্যই দোষনীয়।জীবনে কত কিছুই ঘটে।জীবনের কিছু স্মৃতি নিজের হাতে মাটিচাপা দিতে হয় নিজে ভলো থাকার জন্য।মানুষভেদে চিন্তাও ভিন্নরকম হয়।অনেকেই আছে যাদেরকে অতীত রিলেশনশিপের কথা না বললে সমস্যা বাড়ে।তাদের উচিত বিয়ের পূর্বেই বিষয়টি খোলাখুলি ভাবে পাত্র/পাত্রীর সাথে আলোচনা করা।লক্ষণীয় বিষয় হলো যে আপনাকে বিশ্বাস করে অতীত রিলেশনশিপের কথা বলছে,তাকে ভবিষ্যতে এই বিষয় নিয়ে খোটা দেয়া থেকে বিরত থাকাই উত্তম কাজ হবে।কারো অতীত গুনাহ নিয়ে খোটা দেয়া কবীরাহ গুনাহ এটা ভালোভাবে স্বরণ রাখতে হবে।
প্রশ্ন ৭: ওর সাথে ফিজিকাল রিলেশন হয়ে গেছে?খুব খারাপ লাগছে?এখন কী করণীয়?
রাসূল (সা) বলেছেন, “যতক্ষণ পর্যন্ত কেউ জিনায় লিপ্ত থাকে,ততক্ষণ সে মুমিন থাকে না”(সহীহ মুসলিম, হাদিস নংঃ ৫৭)
তাই যখন কেউ জিনায় লিপ্ত থাকে,সে আসলে মুমিনই ছিল না। তাকে আন্তরিকভাবে তওবা করতে হবে।রাসূল (সা) বলেছেন, “যে গুনাহ থেকে তওবা করে সে এমন হয়ে যায়,যেন সে গুনাহটি করেই নি”।(ইবনে মাজাহ,হাদিস নংঃ ৪২৫০)
তওবার শর্ত তিনটিঃ
১। সেই গুনাহ পুরোপুরি ছেড়ে দেয়া।
২। গুনাহের জন্য অনুতপ্ত হওয়া।
৩। আবার গুনাহে লিপ্ত না হবার ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করা।
তওবা যেন কবুল হয় সে জন্য বেশি বেশি গোপনে দান করা উচিত,গোপনে ইবাদত করা উচিত।এগুলো আল্লাহ তা’আলার ক্রোধ মিটিয়ে দেয়।
আল্লাহ তা’আলা বলেন,
“আর যারা আল্লাহর সাথে অন্য ইলাহকে ডাকে না এবং যারা আল্লাহ যে প্রাণকে হত্যা করা নিষেধ করেছেন যথার্থ কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে না। আর যারা ব্যভিচার করে না। আর যে তা করবে সে আযাবপ্রাপ্ত হবে। কিয়ামাত দিবসে তার শাস্তি দ্বিগুণ করা হবে এবং সেখানে সে স্থায়ী হবে হীন অবস্থায়।
তবে-
তারা নয় যারা তওবা করবে, ঈমান আনবে, আর সৎ কাজ করবে। আল্লাহ এদের পাপগুলোকে পুণ্যে পরিবর্তিত করে দেবেন; আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল, বড়ই দয়ালু। যে ব্যক্তি তওবা করে ও সৎ কাজ করে সে সম্পূর্ণ রূপে আল্লাহর অভিমুখী হয়” [২৫:৬৮-৭১]
প্রশ্ন ৮: আমার কি এখন ওকেই বিয়ে করতে হবে?বিয়ে করলে কি আমার গুনাহ মাফ হয়ে যাবে?
যার সাথে জিনায় লিপ্ত হয়েছে তাকেই বিয়ে করতে হবে এমন যেমন কোনো বাধ্য-বাধকতা নেই,একইসাথে তাকে বিয়ে করলে যে গুনাহ মাফ হয়ে যাবে,এমন দলীলও নেই। গুনাহ মাফের জন্য আন্তরিক তওবাই যথেষ্ট।
প্রশ্ন ৯: আমি জিনা করে ভুল করেছি। এখন বিয়ে করে ওকে পেতে চাই। করণীয় কী?
আল্লাহ তা’আলা বলেন, “যে নিজে ব্যভিচারী সে তো কেবল ব্যভিচারিণী আর মুশরিক নারীকেই বিয়ে করে।আর যে ব্যভিচারিণী সে ব্যভিচারী অথবা মুশরিককে ছাড়া বিয়ে করবে না। আর মুমিনদের উপর এটা হারাম করা হয়েছে”[২৪:৩]
প্রথমে আয়াতটা শুনতে একটু অদ্ভুত লাগতে পারে।কথাটার মানে কী?ব্যভিচারী কেবল ব্যভিচারিণী আর মুশরিকক নারীকেই বিয়ে করে?শায়খ সাদী (রহ) তার তাফসীরে সুন্দর করে এটা বুঝিয়ে দিয়েছেন।যে জানা সত্ত্বেও কোন তওবা না করা ব্যভিচারিণীকে বিয়ে করতে চায় তবে তার ব্যাপারে কেবল দুটি কথাই খাটে-
১। হয় সে নিজে ব্যভিচারী তাই আরেকজন ব্যভিচারিণী বিয়ে করতে তার সমস্যা হচ্ছে না। রুচিতে বাধছে না।
২। কিংবা সে হয়তো ব্যভিচারী না।কিন্তু সে আসলে হালাল-হারামের তোয়াক্কা করে না। আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল (সা) যে বিধান দিয়েছেন তা নিয়ে তার কোন মাথা ব্যাথা নেই।যার অর্থ,সে অবশ্যই একজন মুশরিক। [তাফসীরে সাদি,&১/৫৬১]
এটা কোনো ব্যভিচারী পুরুষের ব্যাপারে যেমন খাটে, ব্যভিচারিণী নারীর ব্যাপারেও খাটে।
তাই যদি নিজে তওবা করার সাথে সাথে যদি অপরজনও তওবা না করে,তবে বিয়ে বৈধ হবে না। তবে দুইজন অনুতপ্ত হয়ে তওবা করলে চাইলে বিয়ে করতে পারে।সেক্ষেত্রে লক্ষ্য করতে হবে, উক্ত জিনাকারী নারী গর্ভবতী কিনা! মাসিকের সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। গর্ভবতী হলে সন্তান জন্মদান পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।আর গর্ভবতী না হলে বিয়ে করা যাবে।
প্রশ্ন ১০: আগে ব্যভিচারে লিপ্ত ছিলাম। বিয়ের পর অতীতে করা ব্যভিচারের জন্য অনুতপ্ত। এখন কী করণীয়?
আলেমগণ বলেন,যদি কোনো ব্যভিচারিণী ব্যভিচার করেনি এমন পুরুষকে বিয়ে করে আর বিয়ের পর নিজের ভুল বুঝতে পারে,তবে উত্তম হচ্ছে তাদের আবার বিয়ের ব্যবস্থা করানো। তবে নতুনভাবে বিয়ে পড়ানো হলে,স্বামী ব্যভিচারের কথা জেনে ডিভোর্স দিতে পারে এমন আশঙ্কা থাকলে গোপন রাখা যাবে। আশা করা যায়,আল্লাহ এ বিয়েকে বৈধতা দিবেন এবং তাকে মাফ করে দেবেন।
প্রশ্ন ১১: জিনায় লিপ্ত হয়ে গর্ভবতী হয়ে গিয়েছি। এখন যদি এবোর্শন করাই,সেটা কি হালাল হবে?
না,হবে না।বরং দুটো গুনাহ তার ওপর বর্তাবে। প্রথমটা ব্যভিচারের। দ্বিতীয়টা ভ্রুণ হত্যার। যদিও কোনো কোনো আলেম,ভ্রুণের বয়স ৪০ দিন পার না হলে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে এবোর্শনের অনুমতি দিয়েছেন।তবে সেটা স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের ক্ষেত্রে। অবৈধ সম্পর্কের ক্ষেত্রে না।
কিছু কিছু ব্যাপার বৈধ ক্ষেত্রে হালাল হতে পারে,কিন্তু অবৈধ ক্ষেত্রে সেটা হারাম হয়ে যায়। যেমনঃ মুসাফির চাইলে পরে রোযা কাযা করে নিতে পারে। কিন্তু সেই মুসাফির যদি মদ কিংবা অন্য কোনো হারাম কিছু করার জন্য মুসাফির হয়,তবে তার সিয়াম কাযা করার অনুমতি নেই।
তাই তাকে উক্ত সন্তান জন্ম দিতে হবে। আর সে সন্তানের কোনো পিতার পরিচয় থাকবে না। তার দায়িত্ব থাকবে সরকার প্রধানের। যেসব দেশে ইসলামী সরকার প্রধান নেই,সেসব দেশের ক্ষেত্রে কী করণীয় তা সেসব দেশের আলেমদের কাছ থেকে জিজ্ঞেস করে নিতে হবে।
প্রশ্ন ১২ : আগে ব্যভিচারে লিপ্ত ছিলাম কিংবা অবৈধ সম্পর্ক ছিল। এটা কি বিয়ের পর সঙ্গীকে জানাতেই হবে?
না,জানানোর প্রয়োজন নেই। উত্তম হচ্ছে আল্লাহ যে গুনাহ গোপন রেখেছেন,সে গুনাহ গোপনই রাখার। কিন্তু যদি আপনার হবু স্বামী আগে থেকেই এই কন্ডিশন দিয়ে রাখেন যে,তিনি কোনো ব্যভিচারিণীকে বিয়ে করতে ইচ্ছুক না,সেক্ষেত্রে আপনার তাকে বিয়ে করা উচিত হবে না। কারণ,এক সময় তিনি ঠিকই জেনে যাবেন।
আপনার উচিত হবে এমন কাউকে বিয়ে করা যিনি আপনার অতীতের চেয়ে বর্তমানকে বেশি গুরুত্ব দিবেন। মাঝে মাঝে আঁধার অতীতের মানুষেরাই সোনালী ভবিষ্যতের সূচনা করে।
প্রশ্ন ১৩: আগে ব্যভিচারে লিপ্ত ছিলাম। ছেলেটা ভালো ছিল না। তাই বাসার চাপে আরেক জায়গায় বিয়ে করেছি। আমার বিয়ে কি বৈধ?
যদি আন্তরিকভাবে তওবা করে বিয়ে করে থাকেন,তবে বিয়ে বৈধ। আর যদি তওবা না করেন,তবে যার সাথে জিনায় লিপ্ত ছিলেন,তাকে বিয়ে করাও বৈধ না।
প্রশ্ন ১৪: বিয়ের পর ব্যভিচারে লিপ্ত হয়েছি। সে ব্যভিচারের দরুণ গর্ভবতী। এখন অনুতপ্ত। কী করণীয়?
বিয়ের পর ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া খুবই গর্হিত কাজ।আমাদের দেশে এ জঘন্য গুনাহের কাজকে আদর করে‘পরকীয়া’বলা হয়। ইসলামে বিয়ের আগে জিনা করলে তার শাস্তি বেত্রাঘাত।কিন্তু বিয়ের পরে জিনা করার একটাই শাস্তি।পাথর নিক্ষেপ করে মৃত্যুদণ্ড। কিয়ামতে আল্লাহ এ ধরনের লোকদের ভয়াবহ শাস্তি দিবেন।
তবে উক্ত নারী ভুল বুঝতে পারলে তওবা করবে। সেক্ষেত্রে,তার স্বামীকে জানানোর প্রয়োজন নেই। উক্ত সন্তান তার স্বামীর পরিচয় বহন করবে।
প্রশ্ন ১৫: বিবাহিত মেয়ের সাথে ব্যভিচার করেছি।তারপর তাকে ডিভোর্স করিয়ে বিয়ে করেছি।এখন আমরা অনুতপ্ত। আমাদের বিয়ে কী বৈধ?কী করণীয়?
এরা তিনটা খারাপ কাজ করেছে।ব্যভিচার করেছে। বিবাহিত অবস্থায় ব্যভিচার করেছে। আরেকজনের স্ত্রীকে প্রলুব্ধ করেছে। রাসূল (সা) তাঁর হাদিসের মাধ্যমে জানিয়েছেন, যে আরেকজনের স্ত্রীর মাথা বিগড়ে দেয়, সে রাসূলের (সা) দলভুক্ত না।
এটা এতোই গর্হিত কাজ যে,মালেকী মাজহাবের কিছু আলেম বলেছেন,আজীবনের জন্য এদের বিয়ে অবৈধ। তবে অধিকাংশ আলেমদের মত হচ্ছে,এরা যদি এরপরেও আন্তরিকভাবে তওবা করে তবে আল্লাহ পরম দয়াময়।
প্রাসঙ্গিক বিষয়ঃউত্তরগুলো কখনো ছেলে আবার কখনো মেয়েকে উদ্দেশ্য করে দেয়া হয়েছে। লতবে ছেলে-মেয়ে উভয়ের জন্যই একই বিধান।উপরের উত্তরগুলোর কারণে, কারো যেন এমন না মনে হয়, ব্যভিচার খুব সহজ একটি গুনাহ।অন্যান্য গুনাহের মত তওবা করে নিলেই হবে, এখন জিনা করতে থাকি। এ ধরনের মানসিকতা নিয়ে চললে, তওবা করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন। আর তওবা করলেও দেখা যাবে সে তওবা আন্তরিক হবে না। এমন হতে পারে, শুধু এ গুনাহের কারণে মৃত্যুর সময় ঈমানহারা হয়ে মরতে হচ্ছে। আর আখিরাতের আযাব তো বহুগুণ বেশি।
তওবা নিয়ে ডাঃ শামসুল আরেফিন’ ভাইয়ের ‘কুররাতু আইয়ুন ২’ বইয়ের ‘নীল কৃষ্ণগহ্বর’ প্রবন্ধ থেকে একটা উদাহরণ টানা যেতে পারে।
“এক গ্রামের মহিলা শীতের শেষে শীতের কাপড়চোপড়-কম্বলটম্বল জ্বাল দিবে। সারাবছরের জন্য তুলে রাখতে হবে তো, তাই। এজন্য বড় ডেকচিতে পানি গরম দিচ্ছিল। হঠাৎ মায়ের কী যেন মনে হল, উর্ধ্বশ্বাসে ছুটে একটু উঠোনে গেল, ধরেন বাথরুমেই পেয়েছে। খেয়াল নেই যে পাকঘরের দরজা আটকাতে হবে। মা যখন টয়লেটে, এর মধ্যে আড়াই বছরের বাচ্চাটা মায়ের খোঁজে এসে ডেগচিতে পড়ে সিদ্ধ হয়ে ভাসছে। এখন মা ফিরে এসে পাকঘরে পা দিয়ে ডেগচির দিকে তাকিয়ে মায়ের প্রথম অনুভূতিটা কেমন হবে? হায়, আমি কী করলাম। হায় আমি কেন পাকঘরের দরজা আটকায়ে গেলাম না। এই অনুভূতিটা হল তাওবা। এক কঠিন অপরাধবোধ। ঐ মা, সারাজীবন এটা ভুলবে না, আরও ১০টা বাচ্চা হলেও এই ঘটনা ভুলবে না, এবং আর কোনোদিন পাকঘরের দরজা না আটকে যাবে না। এই অনুভূতি আসা চাই গুনাহ হবার পর।
আর, তাওবার পর যদি গুনাহের কথা ভেবে মজা লাগে, তাহলে ধরে নেবেন তাওবা কবুল হয়নি। সবচেয়ে বড় কথা আল্লাহর কাছে ‘তাওবাতুন নাসুহা’র দুয়া করতে হবে, এমন তাওবা যা থেকে আর ফিরে আসা যায় না।”
“অবশ্যই আল্লাহ তাদের তওবা কবুল করেন, যারা ভুল করে খারাপ কাজ করে আর সাথে সাথেই তওবা করে। এদেরকেই আল্লাহ ক্ষমা করে দেন।আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়। আর এমন লোকদের ক্ষমা নেই, যারা খারাপ কাজ করতেই থাকে, আর যখন মৃত্যু এসে যায়, তখন বলে, ‘আমি এখন তওবা করলাম’। আর তওবা নেই তাদের জন্য, যারা কাফির অবস্থায় মারা যায়। আমি তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত রেখেছি” [৪:১৭-১৮].
Comments
Post a Comment