মিউজিক ডিপ্রেশন


অনেকেই আছেন যারা বলেন গান শুনে থাকেন ডিপ্রেশন দূর করার জন্য, গান শোনার মাধ্যমে নাকি তাদের ডিপ্রেশন দূর হয়ে থাকে, আসলেই কি তাই? আসলেই কি গান শুনলে ডিপ্রেশন দূর হয়?

না গান শোনার মাধ্যমে কখনো ডিপ্রেশন দূর হয় না। এটা আপনি আজ হোক কাল হোক, নিজেই বুঝবেন ইন শা আল্লাহ্। সমুদ্রের পানি দিয়ে কখনো তৃষ্ণা নিবারণ করা যায়? সমুদ্রের পানি লবণাক্ত—এটি পান করলে তৃষ্ণা আরো বাড়ে। গানের ব্যাপারটিও এমন। গান, মিউজিক, বাদ্য এগুলো আল্লাহর স্মরণ থেকে মানুষকে উদাসীন করে রাখে—অনেকটা মাদকের ন্যায়। মদ বা নেশাজাতীয় দ্রব্য গ্রহণ করার পর খানিক সময় ব্যক্তি অনেকটা সেন্সলেস থাকে, ফলে সে সময়টা তার কাছে কিছুই মনে হয় না। এরপর সেই ঘোর কেটে গেলে আবার আগের মত হয়ে যায়। গানের ব্যাপারটিও অনেকটা এমন—গান শোনার সময়টি একটা ঘোরের মধ্যে কেটে যায়। কিন্তু এটি মনের মাঝে শূন্যতা, উদাসীনতা, উন্নাসিকতা, জড়তা ও স্মৃতিকাতরতা তৈরি করে। 


ডিপ্রেশন দূর করার জন্য আপনার গানের প্রয়োজন নেই। আল্লাহ'কে প্রয়োজন, আল্লাহ্কে জানতে চেষ্টা করুন, ভালোবাসতে শিখুন; তাঁর ইবাদাতে ব্যস্ত থাকুন। যখন আপনি আল্লাহ্কে ভালোবাসতে শিখবেন, আখিরাত সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবেন -ডিপ্রেশন নামক জিনিস বিন্দু পরিমাণও কাজ করবে না আপনার জন্য। বরং অন্যরকম এক শান্তি খুজে পাবেন সৃষ্টিকর্তাকে ভালোবাসার মাধ্যমে। 


নবি কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাদ্যের আওয়াজ শুনলে কানে আঙুল ঢুকিয়ে রাখতেন। গান জিনিসটাকে আমরা যতই নিরীহ (কম গুনাহ) মনে করি-না-কেনো, এটি আল্লাহ্ ও তাঁর হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দৃষ্টিতে গুরুতর পাপ। আল্লাহ্ এবং পরকালে বিশ্বাসী মুমিনদের উচিত নয়, নিজের পছন্দ-অপছন্দের কথা চিন্তা করা, বরং সে তো ইসলামকে গ্রহণ করার দ্বারা আল্লাহর কাছে বিক্রি হয়ে যায়। তখন, আল্লাহর চাওয়াই তার চাওয়ায় পরিণত হয়। 


শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ্ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘‘গান হচ্ছে অন্তরের মদ।’’ [মাজমু‘উ ফাতাওয়া: ১০/৪১৭]


তাঁরই সুযোগ্য ছাত্র হাফিয ইবনুল কায়্যিম (রাহিমাহুল্লাহ্) বলেন, ‘‘কোনো বান্দার অন্তরে কোনো অবস্থাতেই গানের মহব্বত এবং কুরআনের মহব্বত একত্র হতে পারে না।’’ [ইগাসাতুল লাহফান]


আবদুল্লাহ্ ইবনু মাস‘উদ (রা.) বলেন, ‘‘গান অন্তরে মুনাফিকি সৃষ্টি করে।’’ (সনদ সহিহ)


বিকল্প কী?


কুরআন তেলাওয়াত শুনতে পারেন আবার ইসলামি নাশিদ (সংগীত) ও শুনতে পারেন। তবে, সেটাও সতর্কতার সাথে। কারণ, মোটেও মিউজিক ইউজ করে না, এমন নাশিদশিল্পী এই সময়ে বিরল। Vocals only সাইনবোর্ড দেখে ধোঁকায় পড়বেন না। এমনকি, বর্তমানে কুরআনুল কারিমের তিলাওয়াতেও মানুষ বিভিন্ন ইফেক্ট এবং ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ব্যবহার করছে। এগুলো খুব সূক্ষ্মভাবে হচ্ছে। বিশেষত যেসব তিলাওয়াত স্টুডিওতে রেকর্ডিং করা হয়, সেগুলো নিরাপদ নয়। যাচাই করে শুনবেন। সাদামাটা তিলাওয়াতগুলো শুনবেন, যেগুলোতে ব্যাকগ্রাউন্ডে ইফেক্ট নেই। হারামাইন তথা পবিত্র কা’বা ও মাসজিদে নববির ইমামদের তিলাওয়াত শুনুন। এমন আরো অনেকেই আছেন। মোটকথা, যেসব তিলাওয়াতের ব্যাকগ্রাউন্ডে ইফেক্ট নেই, সেগুলো শুনুন। শ্রুতিমধুর কিছু তিলাওয়াত একদিন আপনাদের সাথে শেয়ার করবো, ইনশাআল্লাহ্।


দেখবেন, এই সময়ে অনেকেই মিউজিকের পক্ষে ইনিয়ে-বিনিয়ে কথা বলেন, ‘দফ’ ব্যবহারের বৈধতাকে জেনারালাইজ করে মিউজিককেও জায়েজ বলতে চান তারা। তাদের থেকে সতর্ক থাকুন। 


রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ১৫০০ বছর আগেই আমাদের এমন লোকদের ব্যাপারে সতর্ক করে গেছেন। তিনি বলেন, “আমার উম্মাতের মাঝে এমন কিছু লোক আসবে, যারা ব্যভিচার, পশম, মদ ও বাদ্য-যন্ত্রকে হালাল করে নেবে।” [বুখারি, আস-সহিহ: ৫৫৯০].

Comments

Popular posts from this blog

এক খন্ড হতাশা

বিষাক্ত মাকড়সার জাল

মৃত্যু যন্ত্রনা (Death Pain)