মৃত্যু যন্ত্রনা (Death Pain)
মৃত্যু যন্ত্রনা নিয়ে কিছু কথা
//
[১]
জীবনটা অনেকটা Oneiro মত।চোখের পাতা দুটি বন্ধ করলে পূরনো পাঁচ,পনেরো কিংবা পঁচিশ বছরের পুরোনো সময়গুলোকে মনে হয় যেন,এইতো অল্প ক’দিন আগের মাত্র।জীবনে চলার পথে কত কিছুর সম্মুখীন হতে হয়, অস্থিরতা,ভাল না লাগা,অশান্তি,উদ্বিগ্নতায় ডুবে থাকতে রিতিমত বাধ্য হচ্ছি।কিন্তু মজার ব্যাপার হল সবই ক্ষণস্থায়ী।জীবনের কোনো দুঃখ,হতাশা,কান্না,যেমন দীর্ঘস্থায়ী হয় না ঠিক তেমনি আনন্দগুলোও না।
[২]
দিনশেষে জীবনের অনুভূতিগুলোর কোন পরিবর্তন নেই। সেই Anxiety, pain,wailing,Oneiro হয়ত বিষয়বস্তু বদলে গেছে,কিন্তু জীবনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিটুকুর মতই আমাদের জীবন।শত কর্মব্যস্ততা,চাপ,না পাওয়া তবুও মেনে নিতে হবে একদিন আর অক্সিজেন (O2) গ্যাস নিতে পারব না।পৃথিবীতে আসতে দশ মাস দশ দিন সময় লাগলেও পৃথিবী ছাড়াতে এক মুহূর্তই যথেষ্ট।বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী প্রতিটা মানুষের জন্য যা অবধারিত তা হচ্ছে মৃত্যু।কখন যে ডাক এসে যাবে মৃত্যুর আমরা কেউই জানি না।অনিশ্চয়তার জীবনে কত পরিকল্পনা ভবিষৎ নিয়ে।এই ভবিষৎ এর নিশ্চয়তা কি?
[৩]
মৃত্যুর চেয়ে বড় রিয়ালিটি কী হতে পারে?এই ফ্যান্টাসির জগৎ এ আমরা সবই জানি কিন্তু আমরা কেউই মানি না।জীবনের প্রাচুর্য্যতার ইউলিয়েশনে পরে বেশিরভাগ সময়েই মৃত্যুর মত Reality কে ভুলে যাই এবং এই ফ্যান্টিস্যার নিকষ কালো আঁধারে স্বার্থের দন্দেজড়িয়ে পড়ি।কোন সময়ের অস্তিম সেকেন্ডে জীবন শেষ হয়ে যাবে এটা নিয়ে কখনোই ভাবি না।
[৪]
যে কোন মুহূর্তেই তো একেবারে বিনাপূর্বাভাস আসতে পারে মৃত্যু।আর মৃত্যুর পরেই সব মুছে গিয়ে আপনার আমার নাম হবে শুধু লাশ (যার কোন নাম নেই)।
এতো প্রেমময়ী স্ত্রী এর ভালবাসা,এত অহংকার, এত হিংসা-বিদ্বেষ সবতোপড়েই রবে!বাঁশ এখনো কাঁচা লাশ পচে গেছে,যে মানুষের চেহাড়া,শরীর নিয়ে এত অহংকার গর্ব বাঁশ পচার আগে শরীর পছে গেছে কিসের এত অহংকার?কিসের ক্ষমতার বড়াই?আজ থেকে প্রতিজ্ঞা করুন প্রতিদিন মৃত্যুর কথা ভাবি,মৃত্যুর যন্ত্রনাকে নিয়ে ভাবি।এখন থেকেই নিজেকে একটুএকটু করে প্রস্তুত করি মৃত্যুর যাত্রায়।মৃত্যু একটি Confidential Force।এই Cofidential Force কে মোকাবিলা করা পৃথিবীতে কারো পক্ষেই সম্ভব নয়।যে মহান রবের নির্দেশে মৃত্যু অবধারিত হয়,সেই রবের সাথে সাথে মধুর সম্পর্ক ভালো রাখা যায়,তার প্রতি আনুগত্য পকরা হয়,তাহলে ধারনা করতে পারি মৃত্যু পরবর্তী জীবনে অনন্ত যন্ত্রনা আর দুর্ভোগের শিকার হতে হবে না আমাদের।আল্লাহ কোরআনে বলেছেন,
সূরা আল-ইমরান আয়াত ১৮৫
كُلُّ نَفْسٍ ذَائِقَةُ الْمَوْتِ ۗ وَإِنَّمَا تُوَفَّوْنَ أُجُورَكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ۖ فَمَنْ زُحْزِحَ عَنِ النَّارِ وَأُدْخِلَ الْجَنَّةَ فَقَدْ فَازَ ۗ وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلَّا مَتَاعُ الْغُرُورِ
কুল্লুনাফছিন যাইকাতুল মাওতি ওয়া ইন্নামা-তুওয়াফফাওনা উজূরাকুম ইয়াওমাল কিয়া-মাতি ফামান ঝুহঝিহা ‘আনিন্না-রি ওয়া উদখিলাল জান্নাতা ফাকাদ ফা-ঝা ওয়ামাল হায়া-তুদ্দুনইয়া-ইল্লা-মাতা-‘উল গুরুর।
প্রত্যেক প্রাণীকে আস্বাদন করতে হবে মৃত্যু। আর তোমরা কিয়ামতের দিন পরিপূর্ণ বদলা প্রাপ্ত হবে। তারপর যাকে দোযখ থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, তার কার্যসিদ্ধি ঘটবে। আর পার্থিব জীবন ধোঁকা ছাড়া অন্য কোন সম্পদ নয়।
মৃত্যুর সময় মানুষের অনুভূতি কেমন হয়?মৃত্যু যন্ত্রণা কতই না কঠিন!মৃত্যু এবং মৃত্যু যন্ত্রণা প্রত্যেক মানুষের জন্য অবধারিত।
[৫]
মহান আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় রাসূল (সা:) কে মৃত্যুর স্বাদ নিতে গ্রহন করতে হয়েছিল।আর যখন তিনি মৃত্যুর কিনারায় পৌঁছেছিলেন,যখন তিনি মৃত্যু যন্ত্রণায় আক্রান্ত হলেন।তখন নিজের সাথে এক জগ পানি রেখেছিলেন,আর সেখান থেকে নিজের হাত ডুবিয়ে নিয়ে মুখ মুছতেন এবং বলতেন,
“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ,ইন্না লিল মাওতিলা সাকারাত, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।”
অর্থাৎ: নিশ্চয়ই মৃত্যু যন্ত্রণা বড়ই তীব্রএবং বড়ই কঠিন!
যদি আল্লাহর প্রিয় নবী রাসূল(সা:) মৃত্যু যন্ত্রণায় গ্রহন করতে হয়,আমি বা আপনার অবস্থা কেমন হবে একটু চিন্তা করে দেখুন।
আল্লাহর বানী অস্বীকারকারী বা অবিশ্বাসীদের শাস্তি হবে সর্বোচ্চ।তাদের মৃত্যুর সময় ফেরেস্তারা বলবে," বেড়িয়ে আয়,হে পাপিষ্ঠ আত্মা,আর তোদের জন্য অপেক্ষা করছে আল্লাহর শাস্তি"
তবে আল্লাহর রহমত যাদের উপর থাকবে,আল্লাহর দেয়া বিধানগুলো সঠিক ও সুন্দর ভাবে এই পৃথিবীতে কায়েম করবে তাদের কিছু মৃত্যুযন্ত্রণা হবে পিপড়ার কামরের মত।এরা হলেন আল্লাহর রাস্তায় নিজেকে কোরবানকারী।
[৬]
মৃত্যু বিশেষজ্ঞ নিউইয়র্ক শহরের উইল কর্নেল মেডিকেল সেন্টারের গবেষক ড. সাম পার্নিয়া ও তার সহকর্মীরা প্রকাশ করেছেন তাদের ৩ বছরের গবেষণার উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার।এই গবেষণা অডঅজঊ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।ইউরোপ,কানাডা ও ইউএসের ২৫টি মেডিকেল সেন্টারের ১৫০০ রোগী, যারা‘কোমা অবস্থা’ থেকে ফিরে এসেছেন স্বাভাবিক জীবনে।পার্নিয়া গবেষণা করেছেন মূলত তাদের নিয়ে।পার্নিয়ার গবেষণা থেকে জানা যায়।মৃত্যু মুহূর্তের কোনো ঘটনা নয়,হৃৎপিন্ডের কম্পন বন্ধ হলে ধীরে ধীরে জীবকোষগুলো ক্ষয় হতে শুরু করে। জীবকোষগুলো চলাচলে অক্ষম হতে থাকে আর সব ক্রিয়া বন্ধ হতে সময় লাগে ১০ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা।ওই সময়গুলোর অনুভূতি সম্পর্কে আমাদের কোনো ধারণা নেই।১০ অথবা ২০ শতাংশ মানুষ যারা ‘কোমা অবস্থা’ থেকে ফিরে এসেছেন,কিছুক্ষণ বা ঘণ্টা খানিক পর তিনি জ্ঞান ফিরে পেয়ে কি দেখে এসেছেন সে বিষয়ে নিজেদের ধারনাকৃত বিবরণ দিতে পারেন।মৃত্যু থেকে ফিরে আসা রোগীদের অনেকে কোমা অবস্থায় বিভিন্ম ধরনের কারুকাজ দেখেছেন বলে মনে করেন।এই বিবরণ কতটা সত্য বা কতটা অলৌকিক কিংবা মনের ভুল তা নিশ্চিত করে অবশ্য বলা সম্ভব নয়।
সাধারণভাবে মনে করা হয় মৃত্যু প্রাণীর জীবনে আচমকা এসে সবকিছু তছনছ করে দেয়,কিন্তু চিকিৎসাশাস্ত্রে বলে মৃত্যু বলতে হলে প্রথমে হৃদয়ের কম্পন বন্ধ হতে হবে,ফুসফুস তার ক্রিয়া বন্ধ করবে,যারফলে মস্তিষ্ক তার সব কাজ বন্ধ করে দেবে।ডাক্তার চোখের উপর আলো ফেললে যদি স্নায়ুর ওপর কোনো উদ্দীপনা সৃষ্টি না হয় তবে তাকে মৃত্যু বলে ঘোষণা দেয়া হয়।
রেফারেন্সঃ
1.https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC6179502/
2.https://www.abc.net.au/news/2021-09-07/recalled-near-death-experiences-scientific-research-sam-parnia/100374154
3.https://www.medicalnewstoday.com/articles/283650
4.https://www.medicalnewstoday.com/articles/283650
Comments
Post a Comment